১৯৭৫ সালের ২৪শে সেপ্টেম্বর এভারেস্টের দক্ষিণ-পশ্চিম দেয়ালে প্রথমবারের মতো সফল আরোহণ করেন ইংরেজ কিংবদন্তী পর্বতারোহী ডৌগ স্কট, সাথে ছিলেন ডৌগাল হাস্টন। নেমে আসার পথে ২৮৭০৪ ফুট উচ্চতায় তাঁবু, স্লিপিং ব্যাগ ও অক্সিজেন ছাড়াই উন্মুক্ত আকাশের নিচে কাটিয়েছিলেন এক বিভীষিকাময় রাত – প্রমাণ করেছিলেন ওই উচ্চতাতেই ৯ ঘন্টা কোন সাপোর্ট ছাড়াই বেঁচে থাকা সম্ভব! এটিই ছিল কোন ব্রিটিশের প্রথম এভারেস্ট আরোহন। প্রায় ৩০টি পর্বত বিশুদ্ধ আল্পাইন স্টাইলে প্রথম সামিট সহ আরো অনেক অভিযান করা ডৌগ স্কট ২০১১ সালে পেয়েছেন পাইওলেট ডি’অরের আজীবন সম্মাননা পুরষ্কার “গোল্ডেন আইস-এক্স”। এছাড়াও তিনি ১৯৯৪ সালে ব্রিটিশ সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মানে ভূষিত হন। ১৯৯৯ সালে তিনি রয়েল জিওগ্রাফিক সোসাইটির প্যাট্রন মেডেল, ২০০৫ সালে আউটডোর রাইটার্স এন্ড ফটোগ্রাফার্স গিল্ডের গোল্ডেন ঈগল এওয়ার্ড, ২০০৫ সালেই জন মুইর ট্রাস্ট লাইফ টাইম এচিভমেন্ট এওয়ার্ড এ ভূষিত হন।
১৯৪১ সালে জন্স্কম নেয়া স্কট ১৯৬১ সালে নটিংহাম ক্লাইম্বার্স ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ১৯৭৬-৮২ সালে আল্পাইন ক্লাইম্বিং গ্রুপের প্রেসিডেন্ট, ১৯৯৪-৯৭ সালে ব্রিটিশ মাউন্টেনিয়ারিং ক্লাবের ভাইস-প্রেসিডেন্ট, ১৯৯৯-২০০১ সালে আল্পাইন ক্লাবের প্রেসিডেন্ট, ২০১৪-১৭ সালে মাউন্ট এভারেস্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এবং ২০১৪-১৭ সালে মাউন্টেইন হেরিটেজ ট্রাস্টের ভাইস-চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি “বিগ ওয়াল ক্লাইম্বিং”, “দ্যা শীশাপাংমা এক্সপিডিশন”, “হিমালয়ান ক্লাইম্বারঃ এ লাইফটাইমস কোয়েস্ট টু দ্যা ওয়ার্ল্ডস গ্রেটেস্ট রেঞ্জেস”, “আপ এন্ড এবাউট, দ্যা হার্ড রোড টু এভারেস্ট” এবং “দ্যা অগ্রি” বইয়ের রচয়িতা।
স্কট শুধুই পর্বতারোহণ করেননি, পর্বতের মানুষদের কষ্ট তাঁকে দারুণভাবে ব্যাতিত করতো। ১৯৯১ সালে তিনি কে-টু এর আগে শেষ মানব বসতি আস্কোলেতে ১৭ টি পরিষ্কার পানির লাইন বসান যা ওই এলাকার শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে দেয়। তিনি “কমিউনিটি একশন নেপাল” নামক এক দাতব্য প্রতিষ্টান তৈরী করে তা থেকে নেপালে প্রায় ৬০টি প্রজেক্ট সফল করেছেন।
সেই অকুতোভয় প্রাণ আজ ৭৯ বছর বয়সে আক্রান্ত দূরারোগ্য ব্যাধি – ব্রেইন ক্যান্সার এ। জীবনের শেষ দিনগুলো গুনতে থাকলেও যাকে এভারেস্ট থামাতে পারেনি, তাঁকে কি থামানোর ক্ষমতা আছে ক্যান্সারের! আজ তিনি করলেন (সম্ভবত) তাঁর বর্ণিল জীবনের শেষ ক্লাইম্ব!

ছবিঃ রিচার্ড রেইনার।
জ্বী, ঠিক শুনছেন। এভারেস্টের সামিটে থাকা সেই বিখ্যাত নীল জ্যাকেট এবং সেই আইস-এক্স হাতে তিনি আরোহণ করলেন নিজের বাসার ১২টি সিড়ি, ২০ বার!
অবাক হচ্ছেন! হিমালয়ের বুকে বসবাসকারী দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কল্যানে “কমিউনিটি একশন নেপাল” আয়োজন করে বিভিন্ন রকম তহবিল সংগ্রহের কর্মসূচী। স্কট-হাস্টনের সেই বিখ্যাত এভারেস্ট অভিযানের ৪৫ বছর পূর্তির স্মরণে এখন চলছে “এভারেস্ট স্টেয়ার্স চ্যালেঞ্জ ২০২০”। ডৌগ স্কট ছাড়াও এই ক্যাম্পেইনে আরো আছেন আরেক কিংবদন্তি স্যার ক্রিস বোনিংটন এবং পল টুট ব্রেইথওয়েট।
ঘরে বসে এভারেস্ট আরোহণের এই চ্যালেঞ্জ খুবই সহজ। এই চ্যালেঞ্জে অংশ নিতে আপনাকে-
√ নিজ ঘরের সিড়িতে ২০ বার উঠতে হবে।
√ ২০তম বারে সামিটে নিজের ছবি তুলতে হবে।
√ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এ ছবি প্রকাশ করে ট্যাগ করতে হবে কমিউনিটি একশন নেপাল কে অথবা সরাসরি মেইলে ছবি পাঠিয়ে দেয়া যাবে।
√নিচের লিংকে গিয়ে ইচ্ছামতো অনুদান দেয়া যাবে:
justgiving.com/fundraising/CANeverest2020
√ চ্যালেঞ্জে আমন্ত্রণ জানাতে হবে ৫ জন বন্ধুকে।

নিজের মারাত্মক অসুস্থতা স্বত্তেও এই চ্যালেঞ্জে অংশ নিতে বিছানা ছেড়ে উঠে এই শেষ ক্লাইম্ব করলেন ডৌগ স্কট, জীবনের গোধূলি লগ্নেও রেখে যাচ্ছেন মানবতার নিদর্শন।

সুন্দর উপস্থাপনা
ধন্যবাদ।