উইলি স্টেক – মাউন্টেনিয়ারিং বিশ্বের এক বিস্ময় জাগানো গতি দানবের নাম। তাঁর ঝুলি ভরে গেছে অন্নপূর্ণা সাউথ ফেস সলো ক্লাইম্বসহ নানারুপ অসাধারন কীর্তিতে। ম্যাটাহর্ণ বলুন, অথবা আইগারের নর্থ ফেস এর মতো গ্রেটেস্ট মাউন্টেনিয়ারিং চ্যালেঞ্জকে যিনি ছেলেখেলা বানিয়ে ফেলেছেন তাঁকে নিঃসন্দেহে আখ্যা দেয়া যায় সময়ের সেরা আল্পাইনিস্টদের একজন হিসেবে। বিভিন্ন পর্বতে স্পিড রেকর্ডের জন্যই তাঁকে তাবৎ বিশ্ব চিনে ‘সুইস মেশিন’ নামে।

এই সেপ্টেম্বর মাসেই স্টেক ঘুরে এলেন ‘আমেরিকান আল্পাইন ক্লাব’ এর আমন্ত্রণে আমেরিকা থেকে, সেখানে তিনি নিজের গতি রেকর্ড, অক্সিজেন সাপোর্টহীন ক্লাইম্বিং এবং ৮২ সামিট চ্যালেঞ্জ সহ নানাবিধ বিষয়ে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। এই ব্যাস্ততার ফাঁকেই তাঁর সাথে আলাপ জুড়ে দিয়েছিলেন মাউন্টেনিয়ারিং বিষয়ক ব্লগার আবিগাইল ওয়াইজ। সেই আলাপে উঠে আসে এই সুপার হিরোর অভিজ্ঞতা প্রসূত কিছু মূল্যবান ভাবনা, ভবিষ্যতের পর্বতারোহীদের জন্য তিন অমূল্য দীক্ষা যা অনুবাদের এক ক্ষুদ্র চেষ্টা করা হলোঃ
রুটের কাঠিন্যই সব ঝুঁকির নির্ণায়ক নয়…
তোমাকে নিজের সামর্থের সীমা জানতে হবে। ঝুঁকি প্রধানত দুইটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে – তোমার দক্ষতা, এবং ক্লাইম্বিং এর সময় তোমার মানসিক অবস্থা।
নিরাপদে সামিটে পৌঁছানোর ব্যাপারে শতভাগ আত্মবিশ্বাসী হলেই শুধুমাত্র এগিয়ে যাওয়া উচিত। যদিও শতভাগ আত্মবিশ্বাসও তোমাকে সামিটের নিশ্চয়তা দিতে পারেনা। মনে করো তুমি শারিরীক এবং মানসিকভাবে আরোহনের জন্য প্রস্তূত। কিন্তু ঝুঁকি আকাশচূম্বী হয়ে পরে তখনই যখন তোমার মনোসংযোগ ক্ষণিকের জন্য বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে। তুমি খুব সহজ একটি আরোহনেও মৃত্যুবরন করতে পারো। খুব সহজ একটি ওয়ালও তোমার জন্য বিপদজনক হয়ে উঠে যদি তুমি একে খুব সহজ ভেবে নাও।
তাই জানতে হবে কোথায় থামতে হবে…
মৃত্যুর সঙ্গে সখ্যতা স্টেকের অনেক পুরোনো। এই বছরের শুরুর দিকেই শীশাপাংমা অভিযানে তিনি আবিষ্কার করেন ১৬ বছর আগে হিমবাহ ধ্বসে হারিয়ে যাওয়া লিজেন্ডারী আল্পাইনিস্ট এলেক্স লোয়ে এবং তাঁর সঙ্গী ডেভিড ব্রিজেসের মৃতদেহ। ২০১৫ সালেই নিজের ‘৮২ সামিট চ্যালেঞ্জ’ প্রজেক্ট এর সময় তিনি হারান নিজের ক্লাইম্বিং পার্টনার মার্টিন সেউরেনকে।
২০ বছর বয়সে ক্লাইম্বিং শুরুর সময় তোমার মনে হবে আমার কখনোই খারাপ কিছু হতে পারেনা। এবং তারপর তুমি তোমার চারপাশের মানুষদের পর্বতে মৃত্যু দেখতে শুরু করবে এবং বুঝতে পারবে তুমিও সেই একই নৌকার যাত্রী। মৃত্যু নিষ্ঠুরভাবে মনে করিয়ে দেয় পর্বতে কি গুরুত্বপূর্ণ! সামিটে পৌঁছানোর প্রেরণা তোমাকে সহজেই মোহাবিষ্ঠ করে রাখে – বিশেষত যখন তুমি জানো মিডিয়াসহ অনেকের দৃষ্টি তোমার অভিযানের দিকে। কিন্তু যখনই দেখবে ঝুঁকির পরিমাণ বেশি হয়ে যাচ্ছে, তোমাকে ওই মোহ ভূলে ফিরে আসতে হবে। মাঝেমাঝে এই আত্মসমর্পণই উত্তম। সামিটে পৌঁছাতে না পারা কখনোই ব্যর্থতা নয়। নিজের হাতের বা পায়ের আঙ্গুল হারানোই হলো ব্যর্থতা। পর্বতে মৃত্যুই হলো ব্যর্থতা।
এবং উপভোগ করুন প্রতিটি মূহুর্ত…
স্টেকের ঝুলি গতির রেকর্ড ভাঙ্গা-গড়া এবং বিপদজনক পর্বত সামিটে ভর্তি থাকলেও তিনি অতীতের অর্জনের ভিতর বসবাস করতে চান না। এভারেস্ট হোক অথবা এক ক্ষুদ্র বোল্ডার – তিনি যখন যা আরোহণ করেন ওই মূহূর্তে সেটিই তাঁর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আরোহণ।
সাধারন জিনিসকে উপভোগ করার ক্ষমতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যদি কোন গতির রেকর্ড ভাঙ্গা অথবা বড় প্রজেক্ট সম্পন্ন করাই শুধুমাত্র তোমাকে সুখী করে, তাহলে তুমি আসলে কখনোই সুখী নও।
স্পিড রেকর্ড ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। পাঁচ বছর আগে যাকে দ্রুততম আরোহন মনে করা হতো তা আজকের দ্রুততম সময়ের তুলনায় তুচ্ছ। তাই বর্তমানেই থাকো, প্রকৃতি উপভোগ করো, সামর্থের সীমা অনুযায়ী চেষ্টা করো কতো দূর, কতো উঁচু, কতো দ্রুত তুমি এগিয়ে যেতে পারো। মানুষের উচিত কিছু চ্যালেঞ্জ নেয়া, কিছুটা ঝুঁকি নেয়া। কারন ইদানিংকালে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চ্যালেঞ্জ বা ঝুঁকির অস্তিত্ব নেই। মাঝেমাঝে বরফ শীতল আঙ্গুল অনুভব করা, তুষার ঝড়ের কবলে পরা, ঠান্ডায় প্রকম্পিত হওয়ায় ভালো। কারন এরপরই তোমার অনুভূত হবে সত্যিকারের বেঁচে থাকার স্বাদ।
সূত্রঃ আবিগাইল ওয়াইজের ব্লগ অবলম্বনে।

Recent Comments