নোশাকঃ শীতের যেখানে শুরু

Share

আকাশচুম্বী সুউচ্চ পর্বতমালায় বিচরন শুরু হয় অষ্টদশ শতাব্দী থেকেই। মৃত্যূকুপ গুলোর আছে এক দুনির্বার আকর্ষণ, যে টানে কালেকালে ছুটে যাচ্ছে অনেক দুঃসাহসী পর্বতারোহী, রচিত করেছে অনেক বীরত্বগাথা। নতুনত্বের স্বাদ পেতে কেউ যখন করেছেন অতিরিক্ত অক্সিজেন ছাড়া আরোহন, কেউবা একাকী পাড়ি দিয়েছেন এই ডেথ-জোন। সত্তরের দশকের শুরুর কিছু অকুতোভয় প্রাণ যখন পর্বতারোহনের প্রায় সবকটি চ্যালেঞ্জে জয় করেছেন তখনই পোলিশদের মনে আসে এক আজব ভাবনা। তাঁরা নেমে পরে সাধারন সময়েই ভয়ঙ্কর এই পর্বতমালা গুলোতে শীতকালে নিজেদের সামর্থ প্রমানের এক নতুন লড়াইয়ে। পোলিশদের দেখা এই স্বপ্ন প্রথমবারের মতো বাস্তব রুপ লাভ করে ১৯৭৩ সালে ৭৪৯২ মিটার উঁচু হিন্দুকুশ রেঞ্জের দ্বিতীয় শীর্ষ পর্বত – নোশাক এ। পৃথিবীর সর্ব পশ্চিমের এই ৭০০০ মিটার উচ্চতার পর্বতের অবস্থান আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তের ডুরান্ড লাইন বরাবর। “উইন্টার-১৯৭৩” নামক ১০ সদস্যের এই অভিযান পরিচালনা ও অর্থায়ন করেছিল পোলিশ হাই মাউন্টেইন ক্লাব। অভিযানে আন্দ্রেই যাওয়াদা এবং টাডেউশ পিউতোরস্কি ১৩ই ফেব্রুয়ারী রাত ১১.৩০ মিনিটে পশ্চিম দিকের নরমাল রুট দিয়ে প্রথমবারের মতো শীতকালে হিন্দুকুশের নোশাক পর্বত সামিট করেন। শীতকালে দুর্গমগিরী গুলোতে মানুষের জয়যাত্রার সূত্রপাত হওয়া এই ঐতিহাসিক অভিযানের গল্প আসুন শুনি আন্দ্রেই যাওয়দার মুখে…

………………………………………………………………………………………………………………

সেদিন ছিল ১৯৭২ সালের ২৯ শে ডিসেম্বর। আমরা পোল্যান্ডের ওয়ারশহ রেলওয়ে স্টেশনে আন্তর্জাতিক ট্রেনে চড়ে বসেছি। মন ভীষণ অস্থির হয়ে আছে সবার। সবাই জানি এই মূহুর্তে আমাদের অভিযান এক দুর্দমনীয় গতিতে ছুটে চলেছে। সবাই ছুটে চলেছি প্রথমবারের মতো  শীতকালে ৭৫০০ মিটার উচ্চতার এক হিমালয়ের পর্বত আরোহনের মতো ক্ষেপাটে স্বপ্নের পিছে।   জানি এর মাধ্যমেই আল্পস, ককেশাস এবং ডলোমাইটস এরপর আকাশচুম্বী পর্বতমালায় শুরু হতে চলেছে শীতকালীন পর্বতারোহন অভিযান। মনে খেলা করে যাচ্ছে নানা প্রশ্নের ঝড়। ভাবছি আমাদের সুযোগ কেমন? হিন্দুকুশের ভারী তুষারপাত এবং বিশাল হিমবাহ ধ্বসের ব্যাপারে অনেকের পিলে চমকে দেয়া ভীতিকর দৈববাণী কি সত্যি হয়ে যাবে?

আমাদের লক্ষ “নোশাক”, যা পোলিশদের কাছে সুপরিচিত পর্বত এবং এ কারনেই আমাদের একে বেছে নেয়া। অপরিচিত এলাকায় পথ খুঁজে সময় নষ্ট করতে হবেনা। সব শক্তি সঞ্চিত রাখা যাবে তুষারপাত, অস্থিমজ্জায় কম্পন তোলা ঠান্ডা, ঝড়ো বাতাস এবং শীতের স্বল্প দিনের আলোয় ছুটে চলার মতো সব কাঠিন্যের সাথে লড়াইয়ের জন্য।

৩ টন বোঝা বাহী লাগেজসহ ট্রেনে চড়ে মস্কো এবং তাসকেন্ট হয়ে টেরমেজ যাত্রার ফাঁকেই চলে এলো নববর্ষ। অভিযানের উত্তেজনা কী আর নববর্ষ উদযাপন ঠেকিয়ে রাখতে পারে? রাশিয়ার ওরেনবার্গের কাছাকাছি জর্জিয়ান শ্যাম্পেইন দিয়ে দিয়ে আমরা বর্ষবরণ করলাম। হাসি তামাশার ফাঁকেই কম্পার্টমেন্টের জানালা দিয়ে দেখছি -৩০° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় তুষারের চাদরে ঢাকা কাজাখস্থানের সুবিশাল প্রান্তর।

টাসকেন্টে আমি সঙ্গীদের থেকে আলাদা হয়ে গেলাম। ট্রেন থেকে নেমে ওয়াখানে প্রবেশের অনুমতি নিশ্চিত করতে সোজা উড়াল দিলাম কাবুলের দিকে। বিমানের জানালা দিয়ে মুদ্ধ চোখে তাকিয়ে দেখলাম সুর্যের আলোয় উদ্ভাসিত আমু-দরিয়া (আফগানিস্তান, তাজিখিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং উজবেকিস্তানের সংযোগকারী নদী)। ভাগ্য সুপ্রসন্নই মনে হচ্ছে। নদীর পানি এখনো জমাট বেঁধে যায়নি। এই অবস্থায় বোটে চড়ে আফগানে পাড়ি দিতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো যখন দেখলাম গ্রীষ্মের প্রখর উত্তাপে পুড়তে থাকা আমার পরিচিত কাবুল তুষারের চাদরে ঢাকা! চমকের আরো বাকী রয়ে গেছে। হাতবাড়ানো দুরত্বেই দেখলাম সালাং পাসে জমে থাকা কয়েক মিটার উঁচু তুষারের স্তুপ যা আমাদের কুন্দুস যাওয়ার পথে পাড়ি দিতে হবে। এখানেই মনে হলো বাকী টিমের জন্য অপেক্ষা করা উচিত। দেখা যাক পরবর্তী দিনগুলো আরো কী বিস্ময় নিয়ে অপেক্ষায় আছে?

pakistan_hindu_kush_map

এই বিরুপ পরিবেশে আমাদের সাপ্লাই নিয়ে নোশাকে পৌঁছার চিন্তায় যখন কপালে ভাঁজ পরে যচ্ছে তখনই ভাগ্যদেবী সুপ্রসন্ন হলেন। সালাং পাড়ি দিতেই দেখি অপর পাশে হিন্দুকুশের উত্তর ঢালে তুষার প্রায় নেই বললেই চলে! মূলতঃ ভারত মহাসাগর থেকে বয়ে আসা আর্দ্র বায়ুই হিন্দুকুশের দক্ষিণ দেয়ালে আছড়ে পরে এই তুষারের পাহাড় জমা করে।

কুন্দুসে বাকী দলের সাথে মিলিত হয়ে একটি ট্রাক এবং একটি জীপে করে কোন বাঁধা ছাড়াই চলে এলাম কাজী দেহ্‌ গ্রামে। পথে ড্রাইভার বারংবার পাহাড়ী ঢালে ধান ক্ষেতের ভিতর দিয়ে পাড়ি দেয়ার সময় বিপদজনক বাঁক নিতে বাধ্য হচ্ছিল। ২৫০০ মিটার উচ্চতায় -২০° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এক গ্রামে পোর্টারদের সাথে দীর্ঘ দরকষাকষি করতে হলো। স্থানীয় আদিবাসীরা পর্বতের তুষার পাতকে ভয় পাচ্ছিল। তারা মাত্র দুইদিন সামনের শেষ সবুজ গ্রাম পূত-ঘর (৩৪০০ মিটার) হতে আর সামনে যেতে রাজী হচ্ছিল না। কারন ওই গ্রামই রাতের বেলার ঠান্ডার সময় উষ্ণতার জন্য জ্বালানী এবং আগুনের শেষ ভরসা। অন্য উপায় না থাকায় আমরা রাজী হয়ে গেলাম।

the-team-p-c-andrez-zawada

“উইন্টার-১৯৭৩” অভিযাত্রীদের ছবিটি তুলেছেন আন্দ্রেই যাওয়দা

অবশেষে ২০ই জানুয়ারী আমাদের সাথে ৭০ জন পোর্টারের একটা বহর কাজী দেহ্‌ ভ্যালী থেকে যাত্রা শুরু করলো। মান্দারাস ভ্যালীর মুখেই রাত্রিযাপনের জন্য থেমে গেলাম। রাতের তাপমাত্রা  -৩০° তে নেমে গেলো। পরদিন পোর্টাররা তন্দ্রাচ্ছন্ন থাকায় এবং  ঠান্ডার কারনে অনেক ধীরে আমাদের মালামাল পুত-ঘরে পৌঁছাল এবং সাথে সাথেই ফিরতি পথ ধরলো। শুধু রয়ে গেলো তাদের মধ্যে সাহসী ছয়জন। আমাদের জ্যাকেট পরে তারা ক্যাম্প-১ (৪২০০ মিটার) এ লোড ফেরী করতে সাহায্য করলো। আমাদের অনেক উৎসাহ দিয়ে তারাও এরপর গ্রামে ফিরে গেলো। পিছনে পরে রইলো  সব মালামাল, আমরা এবং আমাদের নোশাক। সবকিছুই এখন আমাদের কাঁধে! সচরাচর গ্রীষ্মকালীন বেসক্যাম্প হতে ৮ কি.মি. দূরে আমাদের বেসক্যাম্প স্থাপন করতে হলো। বেসক্যাম্প থেকে নোশাকের পাদদেশে ক্যাম্প-১ এবং ক্যাম্প-২ (৪৭৫০ মিটার)  পর্যন্ত মালামাল বহন করা আক্ষরিক অর্থেই বিভিষীকা হয়ে দাঁড়ালো। আমাদের দলের অর্ধেক নেমে পরলো অনেক শক্তি শুষে নেয়া এই কর্মযজ্ঞে। ধীরে ধীরে ক্রমাগত তুষারপাত এর সাথে আমরা মানিয়ে নিলাম। দিনের বেলায় তাপমাত্রা -২৫° তে থাকলেও রাতের বেলায় তা নেমে যেতো – ৩৫°তে। এই অবস্থায় বরফ গলিয়ে ২ পাইঁট পানি পানি যোগাড় করতেই ঘন্টা লেগে যাচ্ছে এবং অল্প দিনের আলো চলে যাচ্ছে মালামাল স্থানান্তর এবং রান্নার কাজে।

এক্সপিডিশনের ডাক্তার আমাদের নিয়মিত ফ্রস্টবাইট থেকে বাঁচাতে অয়েন্টমেন্ট দিচ্ছেন। এছাড়াও বাইরে বের হওয়ার সময় আমরা মুখে মেখে নিচ্ছি ক্রিমের এক সরূ প্রলেপ। এরই মাঝে আমরা ২৭ই জানুয়ারী ৫৫০০ মিটারে ক্যাম্প-৩ এবং ৪ই ফেব্রুয়ারী ৬২০০ মিটারে ক্যাম্প-৪ স্থাপন করে ফেললাম। পরদিনই বাঁধলো বিপত্তি, আবহাওয়া ক্রমশ খারাপ হতে শুরু করলো।

চরম তুষারপাত এবং বাড়তে থাকা বাতাসের মধ্যেই টাডেউশ পিউতোরস্কির সাথে ক্যাম্প-৩ এ ফিরে আসলাম। এখানেই আমরা এক সত্যিকারের হ্যারিকেনের মুখোমুখি হলাম । টানা তিনদিন ধরে আমরা শরীরের ওজন দিয়ে তাঁবু আঁকড়ে ধরে রইলাম। অন্য তাঁবুটির ছিন্নভিন্ন দেহাবশেষ তখন পরে রয়েছে ৭০০ মিটার নিচে গ্লেসিয়ারের বুকে। অবশেষে মৃতপ্রায় অবস্থায় আমরা ক্যাম্প-২ তে পালিয়ে এলাম। ভালো আবহাওয়ার আসা হারিয়ে ফেলতে বসেছি। বেসক্যাম্পে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পরেছে। বিষন্নতা ভর করেছে সবার মনে।

summit-push-jawada-l-tadeusz-r-p-c-benon-czechowski

বেনন চেকোস্কির তোলা সামিট পুশ শুরুর সময়ের ছবিতে বামে যাওয়াদা ও ডানে টাডেউশ।

১০ তারিখে বাতাস কিছুটা কমে আসতেই আমরা শেষ চেষ্টার সিদ্বান্ত নিলাম। আমরা ক্যাম্প-২ থেকে শুরু করলাম। বাতাস এবং তুষার এখনো ক্লাইম্বিং এ সমস্যা সৃষ্টি করলেও ক্যাম্প-২ থেকে যাত্রারম্ভ করলাম। ১২ই ফেব্রুয়ারী ৬৭০০ মিটার উচ্চতায় ক্যাম্প-৫ স্থাপন করা হলো। কোনমতেই একটা ছোট্ট তাঁবু স্থাপন করে ভীষন ক্লান্ত অবস্থায় ভিতরে ডুকে পরলাম।  বাতাসের তীব্রতা জানিয়ে দিচ্ছে আর ক্লাইম্বিং করা অসম্ভব। মার্কারী থার্মোমিটার রিডিং দেখাচ্ছে -৪০° সেলসিয়াস। বাধ্য হয়েই নির্ঘুম রাত কাটাতে হলো। হঠাৎ ভোর ৪টার দিকে বাতাস তাঁবুতে কষাঘাত বন্ধ করলো।  বাইরে বেরোতেই দেখলাম চারপাশটা আশ্চর্যরকম শান্ত হয়ে গেছে এবং মাথার উপরে যেনো বসেছে লক্ষ তারার মেলা। চাঁদটাও আজ প্রায় গোলাকার। এই অবস্থাকেই সামিটের জন্য সেরা সুযোগ বলে মনে হলো। ৭১০০ মিটারে আরেকটা ক্যাম্পের পরিকল্পনা থাকলেও সময় নষ্ট না করে ক্যাম্প-৫ থেকেই সামিট পুশের সিদ্বান্ত নিলাম। স্টোভে আমাদের জুতা গরম করে বেলা ১১টায় আমরা আবার যাত্রা শুরু করলাম। সাথে নিয়েছি শুধুই স্যাটেলাইট ফোন, ক্যামেরা, দড়ি, কয়েকটা পিটন এবং অল্প খাবার। শক্তি ঠিক থাকলে মাঝরাতে আরো ৮০০ মিটার উঁচুতে সামিটে পৌঁছানোর কথা। তিন ঘন্টা পর আমরা এসে পরলাম এক স্নো-ফিল্ডে যেখানে সাধারনত গ্রীষ্মে ক্লাইম্বাররা ক্যাম্প-৩ সেট করেন। কিছুটা বিশ্রাম নিতে বসতেই টাডেউশ স্টোভে বরফ গলিয়ে চা বানাতে লেগে গেলো। এরই মাঝে আমি চারপাশের অদ্ভূত সুন্দর হিন্দুকুশ পর্বতমালার ছবি তুলতে শুরু করলাম। আকাশ এখন একেবারেই পরিষ্কার। তখনই হঠাৎ যেনো হৃদস্পন্দন থেমে গেলো। দেখলাম আমাদের বিশ্রাম নেয়ার পাথরের কাছেই পায়ের নিচে তুষারের চাদর ফুঁড়ে বেরিয়ে রয়েছে একটা নীলচে কালো হাত। ১৯৭১ সালের গ্রীষ্মের ৫ জন হারিয়ে যাওয়া মর্মান্তিক অভিযানের একজন এই বুলগেরিয়ান ক্লাইম্বার। তুষারের নিচ থেকে তাঁর শরীর বের করে এনেছে তীব্র বাতাস। এতোটাই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে গেলাম যে এতো অল্প সময়ে কাটিয়ে উঠা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ালো। রাত ৯টার দিকে এক খাড়া সংকীর্ণ জায়গায় এসে পৌঁছালাম যেখান থেকেই শুরু হয়েছে সামিট রিজ। আমাদের চোখের সামনে তখন দাঁড়িয়ে আছে চন্দ্রস্নাত অপূর্ব রুপের তিরিছ মির (হিন্দু কুশের শীর্ষ পর্বত)। রিজের উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে একটা হালকা কিন্তু কনকনে বাতাস।

আমাদের মনে হলো যেনো অল্প সামনেই মূল সামিট। উত্তেজিত হয়ে আমরা ফোনে আমাদের সাথীদের জানিয়ে দিলাম আমরা অল্প কয়েক মিনিটের মধ্যে শীর্ষে পৌঁছে যাচ্ছি। একটু এগুতেই ভূলটা বুঝতে পারলাম। আমরা যাকে সামিট পয়েন্ট মনে করেছি তা আসলে মধ্যম সামিট এবং মূল সামিট তখনো রয়ে গেছে এই খাড়া ঢালের পিছনে আরো প্রায় ১.৫ কি.মি. দূরে।  এই সুবিশাল পর্বতের দিব্যি খেয়ে বলছি এই জায়গা থেকে বাতাসহীন অংশে নেমে যাওয়ার প্রলোভন ঠেকাতে নিজের সাথে রীতিমত যুদ্ধ করতে হয়েছে।  আমি এখনো ব্যাখ্যা করতে পারবোনা কিভাবে সেদিন মধ্যম সামিট হতে মূল সামিটের মধ্যকার ৫০ মিটারের উচ্চতা পেরোতে নিরুদ্যম, ক্লান্তিকর তিন-তিনটি ঘন্টা কাটিয়ে দিয়েছি। মুখের উপর শীতল বাতাস যেনো লাগিয়ে দিয়েছে দিচ্ছে জঘন্যরকম বরফের প্রলেপ। শেষ পর্যন্ত রাত ১১.৩০ এর দিকে আমরা ছোট রকওয়ালের পাশেই উঁচু স্থানটিতে পৌঁছালাম – এই সেই কাঙ্ক্ষিত সামিটে।

পাথরগুলোকে “উইন্টার ৭৩” এর আদলে সাজিয়ে আইস-এক্সের সাথে পতাকা গেঁথে কৃতজ্ঞতাভরে টাডেউশ এবং আমি পরস্পরকে জড়িয়ে ধরলাম। তখন প্রায় -৫০° সেলসিয়াস তাপমাত্রার ভয়ঙ্কর ঠান্ডা। নামতে শুরু করার আগে আমরা বেসক্যাম্প এবং অন্যান্য ক্যাম্পগুলোকে সংক্ষেপে সাফল্যের খবর জানিয়ে দিলাম।

খুব দ্রুত, কিন্তু সতর্কভাবে নামতে শুরু করলাম। কারন মাথার ভিতর তখনো গেঁথে রয়েছে সেই বুলগেরিয়ানের নির্মম পরিণতির কথা। প্রায় ভোর ৪.৩০ এ আমরা ১৭ ঘন্টার ক্রমাগত যুদ্ধের পর ক্যাম্প-৫ এ আমাদের তাঁবুতে ঢুকলাম। জুতা-মোজা বরফে ঢাকা, টাডেউশের দুই বৃদ্বাঙ্গুলি ফ্রস্টবাইট আক্রান্ত। কিন্তু এসবকিছুই প্রথমবারের মতো শীতকালে প্রায় ৭৫০০ মিটার উচ্চতার এক চূড়া জয়ের অনুভূতির কাছে বড্ড ম্লান।

…………………………………………………………………………………………………………………

আমেরিকান আল্পাইন জার্নালের ১৯৭৪ সালের নভেম্বর সংখ্যায় প্রকাশিত এই অভিযানের সফল ক্লাইম্বার এবং দলের নেতৃত্বে থাকা আন্দ্রেই যাওয়াদার লেখা “নোশাক ইন উইন্টার” অবলম্বনে রচিত।

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *