২৬ই ফেব্রুয়ারী, ২০১৬ – অন্য সবার কাছে এই দিনটির তাৎপর্য কি জানা নেই। তবে ফেব্রুয়ারির ছাব্বিশতম দিনটি পর্বতারোহণের ইতিহাসে অনন্য হয়ে থাকবে “নাঙ্গা” খ্যাত জেদী, দুষ্টু ছেলেটার বরফশীতল জেদ ভাঙ্গার দিন হিসেবে। নামের সাথে সঙ্গতি রেখে এই নাঙ্গা পর্বত বহু বছর ধরে আক্ষরিক অর্থেই হাড়ে হুল ফোটানো শীতে নাঙ্গা করে রেখেছিলো দুনিয়ার তাবৎ ক্লাইম্বারদের। শেষ পর্যন্ত শীতের এই দোর্দণ্ড প্রতাপকে এই বছরের জন্য হার মানিয়ে চূড়ায় উৎসব করার সুযোগ পেলেন তিন অকুতোভয় পর্বতারোহী। এবার ঘড়ির কাঁটাটাকে ঘুরিয়ে নিয়ে যাই মাসখানেক আগের এক বিকালে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ক্লাইম্বারদের দুটি দল একত্রিত হয়ে তখন স্বপ্ন দেখছেন পরম আরাধ্য নাঙ্গা পর্বতে শীতকালীন আরোহণের। কে জানতো ঠিক সেই দিনটি থেকেই শুরু হয়ে গেছে বিরূপ প্রকৃতি ও কঠিনতম বাধাকে জয় করার এক মহাকাব্যের।
মাত্রই কদিন আগে ১৯৮৮-৮৯ সাল হতে শুরু হওয়া নাঙ্গা পর্বতের বিরুপতার সাথে ৩১টি শীতল যুদ্বের সফল পরিসমাপ্তি ঘটিয়েছেন ইতালিয়ান সিমোনে মোরো, স্পেনিয়ার্ড এলেক্স জিকন, পাকিস্তানি মোঃ আলী সদপারা। আরেক ইতালিয়ান তামারা লুঙ্গার এর কথা উল্লেখ না করলে এই লেখা পরিপূর্ণতা হারাবে নিশ্চিত ভাবেই। শীতকালীন অভিযানের বিশালত্ব বোঝাতে সিমোনে মোরোর এক সাক্ষাৎকারে দেয়া উক্তি উল্লেখ করা যায়। তিনি বলেছিলেন “যখন তুমি শীতে কোন হিমালয়ান পর্বতারোহনে যাবে, তোমার মনে হবে তুমি একজন মাউন্টেনিয়ার নও বরং একজন এক্সপ্লোরার। তুমি শুধু ক্লাইম্ব করবেনা, বরং প্রবেশ করবে এক অজানা জগতে। এটিই আদি এবং অকৃত্রিম আল্পাইনিজম।”

এবার চলুন একটু পিছনে ফিরে যাই। আসুন পরিচয় করিয়ে দিই এবারকার নাঙ্গা পর্বত অভিযানের কুশীলবদের সাথে, পৃথিবীর নবম সর্বোচ্চ পর্বতে শীতকালীন আরোহণে অংশ নেয়া দলগুলোর সাথে। দলভাঙা-গড়া, প্রতারনা, আবার তার উল্টোপিঠে মরণপণ সাহায্যের এক আশ্চর্য গল্পে ভরপুর নাঙ্গা পর্বত ২০১৬ শীতকালীন অভিযান। এবারকার অভিযানে অংশ নিয়েছিলো ২৪ জন অভিযাত্রী, ৬টি এক্সপিডিশনে বিভক্ত হয়ে – যা এযাবৎকালে সর্বোচ্চ। এই ২৪ জনের মধ্যে ছিল বেশ কিছু বড় বড় নাম, আবার কিছু নাম ছিল অখ্যাত। চলুন শুনি তাদের অভিযানের গল্প।
- সফলতার পথে…
- সফলতার পরে…
ছবিঃ সফলতার পথে এবং সাফল্যের পরে
প্রথমেই বলতে হয় “নাঙ্গা রেভ্যুলেশন” এর কথা যার নেতৃত্বে ছিলেন পোলিশ লিজেন্ড এডাম বিয়েলকি- যার নামের পাশে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে দুটি প্রথম শীতকালীন সামিট – গাশারব্রাম-১(২০১২) এবং ব্রডপিক(২০১৩)- দু’টিই আল্পাইন স্টাইলে, অক্সিজেন সাপোর্ট বিহীন। ডায়ামির সাইডের কিনশোফার রুট দিয়ে এবারের অভিযানে বিয়েলকির সঙ্গী ছিলেন আরেক পোলিশ জাচেক চেক। স্টাইল যথারীতি আল্পাইন। এই অভিযানের জন্য এই দুই ক্লাইম্বার পোল্যাল্ডের অন্যতম শীর্ষ মাউন্টেনিয়ারিং এওয়ার্ড লাভ করেন যার নামটাও সুন্দর (!) “ব্রোঞ্জ এগ”, বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায় ‘তাম্র ডীম্ব’। শুরুতেই তারা খুব দ্রুত ক্লাইম্ব করতে থাকেন। কিন্তু বিয়েলকি পরে গিয়ে আঙ্গুলে প্রচন্ড চোট পেয়ে নেমে আসেন এবং চেকও হয়ে পরেন অসুস্থ। এই অবস্থায় তারা গাঁটছড়া বাধেন এবারের সফল ইন্টারন্যাশনাল এক্সপিডিশনের সাথে। দল বাঁধার একসপ্তাহের মধ্যেই রসদ এবং আবহাওয়ার কারনে ‘নাঙ্গা রেভ্যুলেশন’ টিম অভিযানের সমাপ্তি ঘোষনা করেন।
এবারের সফল “ইন্টারন্যাশনাল এক্সপিডিশন” শুরু হয় ৪ জন সদস্য নিয়ে – স্পেনিয়ার্ড এলেক্স জিকন, ইতালিয়ান ডেনিয়েল নার্ডি, পোলিশ জানুজ গোলাব এবং পাকিস্তানী আলী সদপারা। এই টিমে গোলাব ছিলেন এবারের নবাগত। গত সিজনে বাকী ৩ জন একত্রে নাঙ্গা পর্বত অভিযান করেছিলেন। ১০টি ৮ হাজারী পর্বত সামিট করা এলেক্স জিকন গতবার এসেছিলেন লিজেন্ডারী ক্লাইম্বার ডেনিস উরুবকোর সাথে শীতকালীন কে-২ অভিযানে অংশ নিতে যা পরে চীন-পাকিস্তানের ব্যুরোক্রেটিক জটিলতার কারনে বাতিল হয়ে যায়। সে যাত্রায় সবাই ফিরে গেলেও এলেক্স চলে যান নাঙ্গা পর্বতে এবং এই টিমের সাথে কোয়ালিশন করে গত সিজনে ৭৮৫০ মিটারে পৌঁছাতে সক্ষম হোন। গোলাবের নামের পাশে ততদিনে লেখা হয়ে গেছে বিয়েলকির সাথে গাশারব্রাম-১ এ প্রথম শীতকালীন সামিট। ডেনিয়েল নার্ডির এটা ছিল ৪র্থ অভিযান যার মধ্যে প্রথমবার তিনি অংশগ্রহন করেন এবারের টোমেকের টিমের এলিজাবেথ রেভোলের সাথে। ইন্টারন্যাশনাল এক্সপিডিশনের এবারের লক্ষ্য ছিল ডায়ামির সাইডের কিনশোফার রুট দিয়ে এক্সপিডিশন স্টাইলে আরোহণ। সুন্দর শুরু হলেও অভিযানের মাঝামাঝি সময়ে এই টিম জন্ম দেয় চরম নাটকীয়তার। প্ল্যান নিয়ে জিকনের সাথে বনিবনা না হওয়ায় নার্ডি বেসক্যাম্প ত্যাগ করেন। পরে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের কাছে নার্ডি এক্সপিডিশনের দেনা অপরিশোধিত রেখেছেন এ সংক্রান্ত অভিযোগ জানিয়ে মেইল পাঠান জিকন। উল্টোপিঠে দেনা সংক্রান্ত দায়ভার এক্সপিডিশন লিডার জিকনের কাঁধে চড়ান নার্ডি। এ তিক্ততার খবর মাউন্টেনিয়ারিং বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে ঝড় তোলে।
এবার ফিরে আসি ইতালিয়ান সিমোনে মোরো এবং তামারা লুঙ্গার এর “দ্যা নর্থফেস এক্সপিডিশন” এর গল্পে। তামারা শীতকালে পর্বতারোহণে নবিশ হলেও সিমোনে মোরো এরিমধ্যে ৩টি প্রথম শীতকালীন সামিটের কীর্তি গড়ে ফেলেছিলেন। এগুলো হলো শীশাপাংমা (২০০৫), মাকালু (২০০৯) এবং গাশারব্রাম-২ (২০১১)। এর আগেও তিনি দুইবার শীতকালে নাঙ্গা পর্বত অভিযান করেন যার মধ্যে দ্বিতীয় অভিযানে মোরোর টিম টোমেকের টিমের সাথে যুক্ত হন। সে যাত্রায় তারা ৭২০০ মিটার হতে অভিযান বাতিল করতে বাধ্য হোন। বরফ শীতল চোখ এবং সদা হাস্যোজ্বল মুখের অধিকারী তামারাকে নিয়ে মোরো গত শীতে যান মানাসলু এর মূল চূড়া হতে ইস্ট পিনাকল ট্রেভার্স করার লক্ষ্যে। সেখান থেকে চরম প্রতিকূল আবহাওয়ায় তারা বেসক্যাম্প থেকে রক্ষা পান হেলিকপ্টার রেস্কিউ এর মাধ্যমে। তাই এবার ওদিকে না গিয়ে পুরোনো সঙ্গীকে নিয়ে চলে আসেন নাঙ্গা পর্বতে ডায়ামির সাইডের ‘মেসনার-২০০০’ রুট দিয়ে আল্পাইন স্টাইলে ক্লাইম্ব করতে। অভিযানের মাঝামাঝি পর্যায়ে এসে রসদ কমে আসায় তারা যোগ দেন জিকনের ইন্টারন্যাশনাল এক্সপিডিশনের সাথে।
নাঙ্গা পর্বতের শীতকালীন অভিযানের ইতিহাসে সবচেয়ে পরিচিত অভিযানের নাম “জাস্টিস ফর অল – নাঙ্গা ড্রিম” নামক অভিযান, যার স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন মারেক ক্লোনোস্কি এবং টোমেক মাকিউইক্স নামক দুই পোলিশ। দু’জনে একসাথে ৪টি শীতকালীন অভিযান করলেও গত সিজনে টোমেক অভিযান করেন এলিজাবেথ রোভেলকে নিয়ে এবং ক্লোনস্কি কোন অভিযান করেননি। । অভিমান থেকেই হয়তঃ এবার তাই ক্লোনোস্কি টোমেককে বাদ দিয়েই এক্সপিডিশন স্টাইলে রুপাল ফেসের ‘শেল রুট’ দিয়ে ক্লাইম্ব করার লক্ষ্যে “জাস্টিস ফর অল- নাঙ্গা ড্রিম” টিম ঘোষনা করেন । টিমে ছিলেন আরোও ৬ পোলিশ – পাওয়েল ডুনাজ, পাওয়েল ঊইকোস্কি, পাওয়েল কূডলা, মাইকেল যিকোস্কি, টমাস যিবোস্কি, পিটার টমজা এবং দুই পাকিস্তানী করিম হায়াত, সফদার করিম। এদের মধ্যে ক্লোনস্কি বাদে শুধু ডুনাজ-ই ছিলেন নাঙ্গা পর্বতে শীতের সাথে পূর্ব পরিচিত। ৯ জনের দলের এই অভিযান খারাপ আবহাওয়ার কারনে ৭৩০০ মিটার পর্যন্ত ক্লাইম্ব করতে সক্ষম হয়।
উপরে সব’কটি টিমের গল্পেই যার নাম জড়িয়ে আছে তিনি পোলিশ টোমেক মাকিউইক্স। আসলে নাঙ্গা পর্বতের সাথেও তার নাম সবসময় জড়িয়ে থাকবে কারন তিনিই নাঙ্গা পর্বতে সবচেয়ে বেশী শীতকালীন অভিযান করেন – দুই- তিনবার নয়, গুনে গুনে ৬ বার! “জাস্টিস ফর অল- নাঙ্গা ড্রিম” এর স্বপ্নদ্রষ্টা এই ক্লাইম্বার গত সিজনে ফ্রেঞ্চ লেডী এলিজাবেথ রেভোলকে সঙ্গে নিয়ে ৭৮০০ মিটার পর্যন্ত পৌঁছেছিলেন। রেভোলের ছিল এটি ৩য় অভিযান। “ইন্টারন্যাশনাল রাবার ডাক এক্সপিডিশন” নামক ইন্টারেস্টিং নামের এই অভিযানে অপর সদস্য ছিলেন পাকিস্তানী আরসালান আহমেদ আনসারী, যিনি ইদানিং ফেসবুকে মাউন্টেনিয়ারিং এর খবরের জন্য জনপ্রিয় হয়ে উঠা পেজ “নর্থম্যান” এর একমাত্র এডমিন। প্রথম শীতে নামা আরসালান ক্লাইম্ব করতে না পারলেও বাকী দুইজন ডায়ামির সাইডের ‘মেসনার-২০০০’ রুট দিয়ে আল্পাইন স্টাইলে ক্লাইম্ব করেন ৭৪০০ মিটার পর্যন্ত। টোমেকের ফান্ড ফুরিয়ে গেলে তিনি বেসক্যাম্পে অসহায় অবস্থায় পরে যান। পরে আরসালান অনলাইন ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে টোমেকের জন্য দেশে ফেরার অর্থ যোগাড় করেন। অর্থ সাহায্য পেয়ে ফিরে যাবার সময় গুঞ্জন উঠেছিল টোমেক আরেকবার চেস্টার জন্য বাড়ি না ফিরে বেসক্যাম্পে ফিরে যাচ্ছেন। কিন্তু শেষ মুহুর্তে তিনি সিদ্বান্ত পরিবর্তন করে বাড়ীর পথ ধরেন এবং সেই সাথে নাঙ্গা পর্বতের সবচেয়ে পুরোনো যোদ্বা পরিণত হোন ট্রেজিক হিরোতে। কারন তিনি ফেরার সিদ্বান্ত নেয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই রচিত হয় নাঙ্গা জয়ের গল্প।
শীত যখন মাঝামাঝি তখন বেসক্যাম্পে হঠাৎ আবির্ভাব ঘটে ব্রাজিলিয়ান বংশোদ্ভূত আমেরিকান নারী ক্লাইম্বার ক্লিও ওইডলিচ এর, তার সাথে আরও আছেন নেপাল থেকে নিয়ে আসা ৩ শেরপা পেমা চিরিং শেরপা, তেম্বা ভুটে এবং দাওয়া শেরপা। উদ্দেশ্য এক্সপিডিশন স্টাইলে রুপাল ফেসের শেল রুট। ক্লিও সম্পর্কে এই বেলা একটু বলে নেয়া দরকার। এই দুর্দান্ত মহিলা ১৪টি ৮হাজারী পর্বতের মধ্যে ১০টি পর্বত সামিট করেছেন বলে দাবী করেন, পরে কিছু কারণে নিজেই নিজের দাবী ৮টিতে নামিয়ে আনেন। এই ৮টির মধ্যে আবার ২টি এলিজাবেথ হাওলির (হাওলি নামের এই কিংবদন্তী মাউন্টেইন হিস্টোরিয়ানের গল্প আরেকদিনের জন্য বরাদ্দ থাক) স্বীকৃতি পায়নি। এই বিতর্কিত নারী ক্লিওই ২০১৪ সালে এভারেস্টের বেসক্যাম্প হতে ক্যাম্প-২ পর্যন্ত হেলিকপ্টারে উড়ে গিয়ে আরেক বিতর্কের জন্ম দেন। অতীত যাই হোক আগমনের অল্প সময়ের মধ্যেই খারাপ আবহাওয়ার কারনে তাদের নাঙ্গা পর্বত অভিযান সমাপ্ত হয়। হয়তঃ নাঙ্গাই চায়নি অস্বচ্ছ ইমেজের কাউকে তার বুকে ঠাঁই দিতে।
সামিটের ছবিঃ
বামের ছবিতে আলী ও জিকন, ডানে উপরের ছবিতে আলী ও মোরো। ডানের নিচের ছবিতে মোরো ও জিকন।
এবার হয়ে যাক ছোট্ট করে একটু এই সফল জয়যাত্রার গল্প। শীত ফুরিয়ে এলো বলে। আঘাত পেয়ে, রসদ ফুরিয়ে যখন হতাশ হয়ে একে একে সবাই বাড়ী মুখো তখন নাঙ্গা পর্বতকে আঁকড়ে পরে থাকলেন মোরো, জিকন, তামারা এবং আলী। ভালো আবহাওয়ার কোন লক্ষণ নেই, উল্টো বেসক্যাম্পে বসে বসে হাত পায়ে জং ধরে যাচ্ছে। এমন সময় সূদুর অস্ট্রিয়া থেকে ভেসে এলো প্রখ্যাত আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ কার্ল গেবলের বার্তা। জানা গেলো ২৫-২৮ তারিখ পর্যন্ত উপরের আবহাওয়া অপেক্ষাকৃত ভালো থাকবে। তাই ওই ওয়েদার উইন্ডোকে কাজে লাগাতেই প্রচন্ড ঝড়ের মধ্যেই তারা বেরিয়ে পরলেন ২২ই ফেব্রুয়ারী। ২৩ তারিখ প্রচন্ড ঝড়ো আবহাওয়ায় ক্যাম্প-২ তে আটকা পড়লেও আবহাওয়া একটু ভালো পেয়েই ২৪ তারিখ তারা আবার ক্লাইম্ব করা শুরু করেন। ২৫ তারিখ রাতে তারা ক্যাম্প-৪ স্থাপন করেন ৭১০০ মিটার উচ্চতায় বাজহিন বেসিনের গোড়ায়। অবশেষে এলো সেই মহানাটক মঞ্চস্থ হবার দিন, ২৬ই ফেব্রুয়ারী। বিশ্বের তাবৎ পর্বতপ্রেমী সকাল থেকেই নড়েচড়ে বসে এদিন, সকলের চোখ কম্পিউটার এর স্ক্রীণে। প্রযুক্তির কল্যাণে এলেক্স জিকনের সাথে থাকা পজিশন ট্রেকারে দেখা যাচ্ছে তাদের অগ্রযাত্রা। ছবি/ভিডি ও দেখা না গেলেও এযেনো রিয়াল মাদ্রিদ- বার্সিলোনার মধ্যে চলা “এল-ক্লাসিকো” এর চেয়েও উত্তেজনাময়। শুরুতেই তিনজন ভিন্ন পথে এগুতে থাকেন। আলী বেছে নেন স্নো মুক্ত রকি টেরাইন, অন্যরা বেছে নেন বরফে ঢাকা পথ। কিছুদুর এগুনোর পর মোরো এবং জিকন একসাথে এগুলেও তামারা একটি মারাত্মক ভুল করে ফেলেন – বেছে নেন ভিন্ন পথ। অবশেষে সামিট হতে প্রায় ৭০ মিটার নিচে থাকতে প্রচন্ড ক্লান্তিতে থেমে যায় তামারার জয়যাত্রা। উল্লেখ্য যে তিনি সকালে বমি করেছিলেন। অবশেষে বাকী তিন ক্লাইম্বার বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪.৪০ মিনিটে (পাকিস্তানী সময় ৩.৪০ মিনিট) নাঙ্গা পর্বতের শীর্ষে পা রাখতে সক্ষম হোন – সম্পন্ন করেন এসময়ের একটা অন্যতম বৃহৎ মাউন্টেনিয়ারিং চ্যালেঞ্জের।
পোলিশ ক্লাইম্বাররা শীতকালীন পর্বতারোহণের ইতিহাসে বরাবরই উল্লেখযোগ্য জায়গা দখল করে আছেন। জাতে ক্লাইম্বার এই পোলিশ ক্লাইম্বারদের অন্যতম নাম মাসিয়েজ বারবেকার। মূলত তার নেতৃত্বেই নাঙ্গা পর্বতের শীতকালীন প্রতিকূলতার সাথে ১২ জন পোলিশ ক্লাইম্বার ১৯৮৮-৮৯ সালে আপাতদৃষ্টে ভয়াবহ রকম কঠিন যে কাজ শুরু করেছিলেন এই ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তার সফল সমাপ্তি ঘটালেন এবারের ৩ জন, অনেক নাটকীয়তার পর অবশেষে রচিত হলো কিলার মাউন্টেইন বধ কাব্য। পৃথিবীর সর্বোচ্চ ১৪টি পর্বতের মধ্যে ১৩টির শীতকালীন আরোহণ সফলতা পেয়েছে, বাকী রয়েছে শুধু স্যাভেজ মাউন্টেইন খ্যাত, হাজারো কিংবদন্তী গল্পের জন্ম দেয়া পৃথিবীর দ্বিতীয় শীর্ষ পর্বত কে-২। ইতিমধ্যেই হিমালয়ান ক্রাউন জয়ী ৫ম ব্যাক্তি পোলিশ লিজেন্ড ক্রিজোস্টোভ উইলিকি (এখানেও পোলিশ!) যিনি শীর্ষ ৪টির মধ্যে ৩টি (এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্গা এবং লোৎসে) প্রথম শীতকালীন সামিটের কীর্তিধারী ঘোষনা করেছেন আগামী শীতে কে-২ তে অভিযানের কথা। কে জানে হয়ত আগামী কোন এক শীতের সন্ধ্যায় আবারো ল্যাপটপে কে-২ পর্বতের শীতকালীন সফল অভিযান নিয়ে লিখতে বসতে বাধ্য করবেন পৃথিবীর কোন এক কোণের কোন এক অকুতোভয় পর্বতারোহী।
তথ্য সূত্রঃ
ছবিসূত্রঃ এলেক্স জিকনের অফিশিয়াল ফেসবুক পেইজ এবং ফিচারড ছবিটি commons.wikimedia.org হতে নেয়া।






Recent Comments