ক্যাথেরিনের হাতে গোল্ডেন আইস-এক্স’২০

Share

পর্বতারোহণের অস্কার খ্যাত পাইওলেট ডি’ওর  এ এবার রচিত হচ্ছে নতুন ইতিহাস। ২০০৯ সাল থেকেই এই ঘরানার ক্রীড়াতে অসামান্য অবদানের জন্য ঘোষিত হচ্ছে – আজীবন সম্মাননা পুরস্কার “গোল্ডেন আইস-এক্স”। ২২ই জুলাই ঘোষিত হলো ১২ বছরের এই পুরস্কারের ইতিহাসে প্রথমবার এই সম্মানে ভূষিত হচ্ছেন এক নারী – ১৯৬০ সালে ফ্রেঞ্চ-আলজেরিয়ায় জন্ম নেয়া নারী “ক্যাথেরিন ডেস্টিভ্যাল”।

এইবছর ১৯শে সেপ্টেম্বর পোল্যান্ডের ২৫তম লাডেক মাউন্টেইন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে তুলে দেয়া হবে পাইওলেট ডি’ওর এর পুরস্কার। শুরু থেকে এই পর্যন্ত ১১ বছরে পর্বতারোহণকে ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার স্বীকৃতি স্বরূপ যারা এই পুরস্কার পেয়েছেন তাঁরা হলেন:

★২০০৯: ওয়াল্টার বোনাত্তি (ইতালী)

★২০১০: রেইনহোল্ড মেসনার (ইতালী)

★২০১১: ডৌগ স্কট  (যুক্তরাজ্য)

★২০১২: রবার্ট প্যারাগোট (ফ্রান্স)

★২০১৩: কার্ট ডিয়েমবার্গার (অস্ট্রিয়া)

★২০১৪: জন রস্কেলি (আমেরিকা)

★২০১৫: ক্রিস বোনিংটন (যুক্তরাজ্য)

★২০১৬: ভয়টেক কুর্তাইকা (পোল্যান্ড)

★২০১৭: জেফ লৌয়ে (আমেরিকা)

★২০১৮: আন্দ্রেই স্ট্রেমফেজ (স্লোভাকিয়া)

★২০১৯: ক্রিস্টোফ উইলিকি (পোল্যান্ড)

পাইওলেট ডি’ওর এর ঘোষণায় নিচের প্রকাশনায় ফ্রেঞ্চ পর্বতারোহী এবং লেখক ক্লাউডি গার্ডিয়েন পর্বতারোহন এবং রক-ক্লাইম্বিংকে একান্ত নিজস্ব ভঙ্গিতে নিয়ে আসা এই অসাধারণ নারীর কীর্তি বর্ণনা করেছেন। ভয়ংকর সব বাঁধা অতিক্রম ছাড়াও ক্যাথেরিন ফিল্ম, বই, ছবিতে নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন যা নি:সন্দেহে পরবর্তী প্রজন্মের পর্বতারোহী এবং রক-ক্লাইম্বারদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

 

“স্পোর্ট ক্লাইম্বিং জনপ্রিয় হতে থাকা এবং রক-ক্লাইম্বাররা নিত্যনতুন চমক এনে দেয়া সময় ৮০ এর দশকে মাঝামাঝি সময়ে ক্লাইম্বিং জগতে নিজের স্থান তৈরী করেন ক্যাথেরিন ডেস্টিভ্যাল। অনেক কম বয়স থেকে পর্বতারোহণ করলেও এই নতুন সংযোজনে ক্যাথেরিনের অর্জন তাঁকে নিয়ে আসে মিডিয়ার আলোচনায়।

১২ বছর বয়সে ফন্টেইনেব্লু আরোহনের পর তিনি মন্ট ব্লঁ ম্যাসিফে কঠিন রুট গুলো আরোহন শুরু করেন। ৮০’র দশকের মাঝামাঝি তিনি স্পোর্ট ক্লাইম্বিং এ অংশ নিতে থাকেন। প্রথম নারী হিসেবে ৮এ গ্রেড রেডপয়েন্ট আরোহন তাঁকে রক-ক্লাইম্বিং ষ্টার হিসেবে সর্বত্র পরিচিত করে। গুটিকয়েক লোকই জানতেন যে তিনি এর আগে আল্পসে অনেক কঠিন রুট আরোহন করেছেন।

১৯৯০ সালে রক-ষ্টার আবারো ফিরলেন পর্বতে। এবার পেটিট ড্রূ’তে বোনাত্তি পিলারে একাকী আরোহন নিয়ে। এই অসাধারণ অভিযান তাঁকে এনে দেয় পর্বতারোহীর পরিচয়। এরপর তিনি ১১ দিনের অভিযানে পেটিট ড্রূ’তে পশ্চিম দেয়ালে এক নতুন পথে আরোহন করেন। এরপর তিনি রচনা করেন সোলো উইন্টার ট্রায়োলোজি: ১৯৯২ এ আইগার নর্থ ফেস, ১৯৯৩ এ  গ্রাণ্ডেজ জোরাসেস এর নর্থ ফেসে ওয়াকার রেম এবং ১৯৯৪ এ ম্যাটাহর্ণ এর নর্থ ফেসের দ্যা বোনাত্তি রুটে – শীতকালে একাকী আরোহন।শেষ পথটি এখনো খুব কমই পুনরাবৃত্তি হয়েছে, যা ছিল তাঁর দ্বিতীয়বার বোনাত্তি রুটে আরোহন এবং কোন নারীর আল্পসে প্রথম এমন কীর্তি।

কিন্তু ক্যাথেরিন শুধুই এক পর্বতারোহী এবং রক-ক্লাইম্বার হিসেবে নিজেকে পরিচিত করতে চাননি, চেয়েছেন স্বাধীন এক নারী হিসেবেই তাঁর কীর্তি মূল্যায়িত হোক। এই ধরণের দর্শন কয়জনই বা ধারণ করেন? তিনি প্রমান করেছেন এক নারী পুরুষদের মতোই কঠিন অভিযান করতে পারে।

ক্যাথেরিনের দৃষ্টি  এরপর গিয়ে পরে অতি উচ্চতায় টেকনিক্যাল আল্পাইনিজমে। ট্র‍্যাঙ্গো টাওয়ারে স্লোভেনিয়ান রুটে দ্বিতীয় একাকী আরোহন, শীশাপাংমার সাউথ-ইস্ট ফেস আরোহন, অন্নপূর্ণা সাউথ ফেস, মাকালুর পশ্চিম পিলার, লাটোক-১ এ নর্থ রিজে ব্যর্থ অভিযানে হিমালয় এবং কারাকোরামে রচিত হয় ক্যাথেরিনের পদাচরণার গল্প। এন্টার্কটিকার সেন্টিনেল রেঞ্জে তিনি দুইটি পর্বতে প্রথম আরোহনের কীর্তিও গড়েন। তিনি আমেরিকা, মালি এবং সিনাই এ অনেক পাথুরে দেয়ালেও আরোহন করেন।

অবধারিতভাবেই ফটোগ্রাফার এবং ফিল্ম মেকারদের দৃষ্টি গিয়ে পরে ক্যাথেরিনের উপর। ২০০৭ সালে রেমি তেজিয়ারের নির্দেশনায় পর্বতারোহণের সৌন্দর্য নিয়ে এক ছবির কাজ শুরু হয়। এতে ক্যাথেরিন গ্র্যান্ড ক্যাপুচিনের কঠিন পাথুরে পথ ভয়েজ সেলন গালিভার আরোহন করেন। এই ছবির মূল আকর্ষণ ছিল ক্লাইম্বিং মুভমেন্টগুলো সৌন্দর্য প্রদর্শন, বোনের সাথে গ্রেপনের শীর্ষে উঠার আনন্দ এবং বন্ধুদের  সাথে আইগুলি ভার্টে আরোহন।

পর্বতারোহণের সত্যিকার সৌন্দর্য যে আরোহনের কাঠিন্যের চেয়ে বেশি কিছু তা প্রকাশ করা এই ছবির নাম অনুবাদ করলে দাঁড়ায় “চূড়া পেড়িয়ে”। পর্বতের প্রাকৃতিক বৈচিত্রে নিমগ্ন মন এবং সাথীদের মাঝে তৈরী হওয়া বন্ধুত্বের স্মৃতি রয়ে যায় কঠিন রুটে বা দ্রুততম সময়ে আরোহনের স্মৃতির চেয়ে বেশি সময়।

এসেনশন্স নামে এক চমৎকার আত্মজীবনী লেখার পর তিনি নিজের প্রকাশনা “লেস এডিশন্স ডু মন্ট ব্লঁ” শুরু করেন। এতে তিনি স্বল্প পরিচিত লেখকদের লেখা প্রকাশ করেন। প্রকাশনার গুনাগুন এবং রুচির কারণে তিনি দ্রুতই সুনাম অর্জন করেন। ক্লাইম্বিং এর মতোই এটিও প্রকাশনার জগতে দাগ কাটে। তিনি পর্বতারোহী বা প্রকাশক হিসেবে নিজের সুনামের কথা না ভেবে সামনের দিকে ক্রমাগত এগিয়ে চলাতেই বিশ্বাসী।”

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *