আপডেট (১২.০৮.২০২০):
যারা পর্বতে ফিরতে চাইছিলেন তাঁদের জন্য নেপালের হিমালয় থেকে এলো দুঃসংবাদ, আর পাকিস্তানের কারাকোরাম থেকে সুসংবাদ! ১৭ই আগস্ট থেকে বিমান চলাচল চালু করার কথা থাকলেও আগস্টের শুরু থেকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় নেপাল সরকার সেই সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে। আপাততঃ ৩১শে আগস্ট পর্যন্ত নেপালে বিমান বা সড়ক পথে বিদেশী নাগরিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়াও নেপালে বিদেশী প্রবেশের পর হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা বললেও এই সংক্রান্ত নীতিমালা এখনো পরিষ্কার নয়। এরপরের সিদ্বান্তের জন্য অপেক্ষায় থেকে তাই বলা যায় নেপাল হিমালয়ে শরৎ মৌসুম এখন হুমকির মুখে। উল্লেখ্য যে ১০০০ দিনে সবক’টি আটহাজারী পর্বত কৃত্রিম অক্সিজেন সহায়তা ছাড়া আরোহনের প্রজেক্টে থাকা সার্গি মিনগোট্টে মাকালু অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
অন্যদিকে পাকিস্তানে করোনা সংক্রমণ অনেক বেশী হলেও বর্তমানে সংক্রমণের হার কিছুটা স্থিতিশীল হয়ে আসায় পাকিস্তান এই ৮ই আগস্ট থেকে খুলেছে আন্তর্জাতিক বিমান যোগাযোগ। এবং মাত্র ৪ দিনেই সেখানে প্রথম বিদেশী অভিযানের জন্য পৌঁছে গেছেন জার্মানির বিখ্যাত পর্বত গাইড ফেলিক্স বার্গ। লক্ষ্য পরিষ্কার করে না বললেও ধারণা পাওয়া গেছে উদ্দেশ্য কারাকোরাম।
মূল পোস্টঃ
কোভিড-১৯ এর ভয়াল থাবা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত না হয়েও ১৭ই আগস্ট থেকে নেপালে চালু হচ্ছে আন্তর্জাতিক বিমান যোগাযোগ এবং সেই সাথে চালু হচ্ছে ট্রেকিং এবং অভিযানের জন্য অনুমতি দেয়া। ট্যুরিজম বন্দ্ব থাকায় প্রতিমাসে ৮৩ মিলিয়ন ডলার আয় বঞ্চিত হওয়া নেপালের জন্য এই পদক্ষেপ খুবই স্বাভাবিক। শরৎকে সামনে রেখে অপারেটররা অনেকেই ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছেন এভারেস্ট, মানাসলু, ধৌলাগিরি, চৌ-ইয়্যু (নেপাল দিক থেকে), নেমজুং, এভারেস্ট-লোৎসে ট্রেভার্স থেকে শুরু করে অনেক চোখ ধাঁধানো প্যাকেজ।
কিন্তু কিছু সম্পূরক প্রশ্ন থেকেই যায়-
★নেপালে পৌঁছে হোটেলে থেকেই করতে হবে কোভিড-১৯ সনাক্তের পরীক্ষা এবং নেগেটিভ রিপোর্ট এলেই মিলবে অনুমতি। কিন্তু এই যে সপ্তাহখানেক সময় হোটেলে শুয়ে-বসে থাকা লাগবে এবং টেস্ট এর খরচ যাবে নিজের পকেট থেকেই। এই ঝামেলা ও অতিরিক্ত খরচ এর ধাক্কা সামলাতে পারবে কয়জন?
★যেসব দেশগুলোতে এখনো আন্তর্জাতিক ভ্রমণ সীমিত আছে দেখানের অভিযাত্রীদের কি হবে?
★কারো ভাইরাসে আক্রান্ত হবার লক্ষণ দেখা দিলে বেসক্যাম্পে তাঁদের নমুনা পরীক্ষা কি সম্ভব?
★সহযোগীদের কেউ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তাঁর কোয়ারেন্টাইনের খরচ বহন করবে কে?
★অতি উচ্চতায় স্বাভাবিক অবস্থাতেই মানুষের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা দূর্বল হতে থাকে। এই অবস্থায় বেসক্যাম্পে ভাইরাস আক্রান্ত হলে মৃত্যুর ঝুঁকি স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে একটু বেশি নয় কি?
★একা কিছু পর্বতারোহী, কিছু ছোট দল এবং করোনা থেকে সেরে উঠা ইমিউনিটি থাকা কিছু ক্লাইম্বার আগ্রহী হলেও অভিযানের মূল খরচ আসে স্পনসরদের থেকে। বৈশ্বিক এই অর্থনৈতিক মন্দার সময়ে কয়জন পারব এই অসাধ্য সাধন করতে?
★মানাসলু বা এভারেস্টে ভীড় কম থাকবে। সেই সাথে অভাব থাকবে বড় দল গুলোর নিয়ে যাওয়া বিশাল শেরপা দলের। আলপাইন স্টাইলের পর্বতারোহীদের ছাড়া বাকিদের জন্য রুট-ফিক্সিং করবে কে?
বিদেশী বড় দলগুলো বেশিরভাগ ঘোষণা করেছে তাঁরা শরতে হিমালয়ে দল পাঠাবেনা। ব্যাপারটা অনেকটা পর্বতারোহণের মতোই। একজন অভিযাত্রীকে যেমন নিরাপদে আরোহন করার জন্য নিচে এসে ভালো সময়ের অপেক্ষা করতে হয় ঠিক তেমনই।
দেখা যাক কে জয়ী হয়: হিমালয়ের আকর্ষণ, অর্থ, নাকী কোভিড-১৯ এর ভয়?

Recent Comments