মামেরী: আধুনিক পর্বতারোহণের জনক

Share

আলবার্ট মামেরী  ইতিহাসে শুধুমাত্র অসাধারণ কিছু অভিযান করেই যিনি দাগ কাটেননিবরং অবদান রেখেছিলেন পর্বতারোহণের  ধারণাকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করে। তিনি ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে অনেক ধ্যান ধারণার অকল্পনীয় পরিবর্তন ঘটিয়েছিলেন এবং তা যে আসলেই সম্ভব তা করেও দেখিয়েছিলেন। সেই ধারণাগুলো বিংশ শতাব্দীতে এসে জনপ্রিয়তা লাভ করে। তিনি বের হয়েছিলেন তৎকালীন অভিযানের সাথে বৈজ্ঞানিক গবেষণা বা জাতীয়তাবাদের চেতনার ধারণা থেকে। আল্পাইনিজমের আধুনিক ধারণা মূলত তার কাছেই জন্ম নেয়। তিনি অভিযান করতেন নিজের সন্তুষ্টির জন্যনিজের সীমাবদ্বতাকে অতিক্রম করার জন্যনিজের সামর্থ্যকে পরখ করার জন্য – কোন লাভ বা গৌরবের জন্য নয়। তিনিই প্রথম গাইড ছাড়া পর্বতারোহণের ধারণাকে প্রতিষ্টিত করেন। প্রথাগত নিয়মের বাইরে যাওয়ায় তাকে আল্পাইন ক্লাবের সদস্যপদও দেয়া হয়নি। তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি স্বপ্নের দিগন্ত বিস্তৃত করে দেখিয়েছিলেন আল্পসের বাইরেও সুবিশাল পর্বতমালায় অভিযান করা যায়। প্রথাগত দর্শনের বাইরে গিয়ে তিনি বলেছিলেন “পর্বতারোহণের শৈলী হলো বিশুদ্ব রুপে (কৃত্রিম নয়) উঁচু চূড়ায় নিজের প্রতিভার উন্নয়ন”

নিজস্ব ধ্যান ধারণার জন্য মামেরী পর্বতারোহণের গোষ্ঠীতে ছিলেন যথেষ্ট বিতর্কিত। তিনি তার অসাধারণ বই “মাই ক্লাইম্বস ইন দ্যা আল্পস এন্ড ককেশাস” এ লিখেছিলেন “প্রায়শ:ই পর্বতকে তিনটি ধাপ অতিক্রম করতে দেখা যায়: অগম্য পর্বত – আল্পসে সবচেয়ে কঠিন আরোহন – নারীদের জন্য সহজ একটি দিন! তিনি পর্বতারোহণ শুরু করেন দক্ষিণ ইংল্যান্ডের খাড়া দেয়ালগুলোতে. দুর্বল শারীরিক গঠন এবং  মেরুদণ্ডে এক আঘাত এর কারণে তিনি ভার বহন করতে পারতেন না। এইজন্যই তিনি নিজেই তৈরী করেন হালকা যন্ত্রপাতি। এমনকি তৈরী করে ফেলেন জুতার সাথে ব্যবহারের জন্য এক বিশেষ ধরণের খিল। তিনি নিজে আরও তৈরী করেন এক হালকা ধরণের তাঁবু, যা সেই সময় বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। আইস এক্সকে পোল হিসেবে ব্যবহার করা এই তাঁবুর নামও ছিল মামেরী টেন্ট

th-maison-dieu-house-1-ls-2011

মাইসন ডিও হাউজ – মামেরীর জন্মস্থান

আলবার্ট ফ্রেডরিক মামেরী ১৮৫৫ সালের ১০ই সেপ্টেম্বর ইংল্যান্ডের ডোভারের বিগিন স্ট্রিটের মাইসন ডিও হাউজে জন্মগ্রহণ করেন।  উইলিয়াম রিগডেন মামেরী ও এস্টারের দুই সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। ১৮৫০ সালে উইলিয়াম ও এস্টার এক চামড়ার কারখানা কিনেন এবং এর সম্প্রসারণে মনোযোগী হন। ছোট থেকেই ছেলে উইলিয়াম মামেরী ও আলবার্ট মামেরী পড়ালেখার পাশাপাশি পারিবারিক ব্যবসাও দেখাশোনা করতেন। বাবা উইলিয়াম ১৮৬৫-১৮৬৭ পর্যন্ত টানা তিন মেয়াদে ওই শহরের মেয়র নির্বাচিত হন। তৃতীয় মেয়াদ শেষ হতেই মাত্র ৪৮ বছর বয়সেই বাবা উইলিয়াম যখন মারা যান তখন মামেরীর বয়স মাত্র ১৩। বাবার মৃত্যুর শোক কাটাতে মা তাদের দুই ভাইকে ছুটিতে পাঠিয়ে দেন আল্পসে। ডোভারে ফিরে এসেই পারিবারিকভাবে সিদ্বান্ত হয় যে উইলিয়াম পারিবারিক ব্যবসা দেখবেন এবং তখন স্কুলছাত্র আলবার্ট মামেরী তাকে সহায়তা করবেন। আল্পসে সেই ছুটি থেকেই মূলত পর্বতের প্রতি ভালোবাসা বাড়তে থাকে মামেরীরযা দিনে দিনে আরো গভীর হতে থাকে। তিনি এই সম্পর্কে তাঁর বইয়ে লিখেছিলেন “ওই ক্র্যাক গুলো আর জমে থাকা তুষার আমার মাঝে গভীর আসক্তি জাগিয়ে তোলে, যা দিনে দিনে বাড়তেই থাকে এবং আমার জীবন ও চিন্তার বিশাল অংশ দখল করে নেয়”। 

অবশেষে মামেরীর আবার সুযোগ আসে ১৮৭১ সালে আল্পসে যাবার। এই যাত্রায় ৪৪৭৮ মিটার উচ্চতার ম্যাটাহর্ণের দিকে তাকিয়ে তিনি ভড়কে গিয়েছিলেনভেবেছিলেন এই পর্বত আরোহন তার দ্বারা মোটেই সম্ভব না। কিন্তু মাত্র তিন বছর পরই তিনি আবার আল্পসে ফিরে আসেন এবং মাত্র ১৬ বছর বয়সে ম্যাটাহর্ণ সামিট করে ফেলেন। সেই প্রথম তাঁর মনে মূলত পর্বতারোহী হবার বাসনা জাগে, যা বেগবান হয় তখনকার বিখ্যাত সুইস গাইড আলেক্সান্ডার বার্গেনারের সাথে ১৮৭৯ সালে পরিচয়ের পর। তাঁরা সেবারই ম্যাটাহর্ণে নতুন এক রুট ওপেন করে ফেলেন। মামেরী ও বার্গেনার এর জুটি ছিল খুবই শক্তিশালী এবং তাঁরা একেরপর এক আল্পসে অনেক কঠিন ক্লাইম্ব করতে থাকেন। অনেক কঠিন গ্রানাইট পর্বত ছিল – যেগুলো সবাইকেই টানতো, কিন্তু ঐসময় কেউ আরোহনের চেষ্টার চিন্তাও করেননি। সেইসব পর্বত এই জুটি একেরপর এক আরোহন করতে থাকেন। কিন্তু মামেরী ছিলেন অনেক বেশি সৃজনশীল এবং ১৮৯২ সাল থেকে তিনি কোন গাইড ছাড়াই পর্বতারোহন পুরোদমে শুরু করেন। তার বিভিন্ন অভিযানের মধ্যে সেসময়কার কঠিনতম পাথুরে চ্যালেঞ্জ হিসেবে পরিচিত ৩৪৮২  মিটার উচ্চতার গ্রেপন আরোহন তাকে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়। মামেরী সেই সামিটে বসে শ্যাম্পেইন দিয়ে উদযাপন করেনযা তার ভিন্ন রূপ ব্যক্তিত্বনিয়ম ভাঙার মানসিকতার পরিচায়ক।   

Cervino2-361237

ম্যাটাহর্ণঃ মামেরীর প্রিয় খেলার মাঠ

মামেরীর আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব ও অর্জনের ফলে তাঁর সাথে পরিচয় ঘটে জেফ্রি হাস্টিংসজন নরম্যান কোলি ও উইলিয়াম স্লিঙসবের মতো ভালো কিছু ক্লাইম্বারের সাথে। তাঁরা একসাথে আল্পসে ও ককেশাসে একেরপর এক অভিযান করতে থাকেন গাইড ছাড়া। বার্গেনারের সাথে বন্ধুত্ব কখনোই নষ্ট না হলেও পর্বতারোহনে নিজের স্বাধীনতা আনতে তিনি এই পথেই এগিয়ে যান। তিনি বলেছিলেন যখনই আমি একটি পর্বত আরোহন করতাম মনে হতো যেন এর সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। আল্পসে এক ট্রিপে মামেরীর পরিচয় হয় এক উকিলের মেয়ে ম্যারী প্যাট্রিকের সাথে যিনি  নিজেও পর্বতারোহন উপভোগ করতেন। ১৮৮৩ সালে তাঁরা বিয়ে করেন এবং মধুচন্দ্রিমার অংশ হিসেবে তাঁরা একসাথে সামিট করেন ম্যাটাহর্ণ। ১৮৮৫ সালে তাঁদের ঘর আলোকিত করে জন্ম নেয় মেয়ে হিলডা। সংসারের পাশাপাশি মামেরী আল্পসে একের পর এক কঠিন থেকে কঠিনতর রুটে আরোহন চালিয়ে যেতে থাকেন,  তিনি ১৮৭৯ থেকে ১৮৯৪ এর মাঝে আল্পসে ১১টি রুটে প্রথম আরোহন করার অনন্য দৃষ্টান্ত গড়েন। এমনকি মাউন্ট ব্লা পর্বতশ্রেণীর আইগুইলি ডু গ্রেপন এর এক ফাটলের নামকরণও হয়ে যায় তাঁর নামে “মামেরী ক্র্যাক”।

th-albert-mummery-with-daughter-hilda-from-tiger-in-the-snow-by-walter-unsworth-pub-victor-gollanez-ltd-1967

মামেরী ও মেয়ে হিলডা

১৮৮৮ সালে তাঁর মা এস্টার মারা যান. তিনি দারিদ্র বিমোচনে নিরন্তর পরিশ্রমের জন্য প্রসিদ্ব ছিলেন। জুলাই এর দিকে হিমালয় অভিযানের প্রস্তুতি নিলেও মায়ের মৃত্যুতে তিনি ভাই উইলিয়ামকে পারিবারিক ব্যবসাতে সহায়তা করতে ডোভারেই থেকে যাবার সিদ্বান্ত নেন। ১৮৮১ সালের সমীক্ষাতে দেখা যায় তাঁদের পারিবারিক ব্যবসাতে ২৭ জন পুরুষ ও ৩ জন বালক কর্মরত ছিল। মামেরী এরই মাঝে লেইবুর্ন রোডে নিজের বাড়ি কিনে স্ত্রী মেরী ও কন্যা হিলডাকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন। উইলিয়াম ততদিনে শহরের কাউন্সিলরের দায়িত্ব নেয়ায় মামেরী ভাইকে চামড়ার ব্যবসায় সহযোগিতা করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। ব্যবসা চালাতে গিয়ে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বন্ধু জন এটকিন্সন হবসন (১৮৫৮-১৯৪০) কে সাথে নিয়ে লিখে ফেলেন “দ্যা ফিজিওলজি অফ ইন্ডাস্ট্রি” (১৮৮৯) বই। এই বইটি তখনকার প্রচলিত সামষ্টিক অর্থনীতির অনেক ধারণাকেই পাল্টে দেয়।      

এতকিছুর পরেও পর্বত মনের ভিতর থেকে হারিয়ে যায়নি। পর্বতে আর যাওয়া হবেনা এই ভয় থেকেই নিজের অবসর সময়ে তিনি আত্মজীবনী মাই ক্লাইম্বস ইন দ্যা আল্পস এন্ড ককেশাস লিখে ফেলেন। অবশেষে ১৮৯৫ সালে পৃথিবীর ৯ম শীর্ষ পর্বত ৮১২৫ মিটার উচ্চতার হিমালয়ের নাঙ্গা পর্বতে যাবার সুযোগ পেলেন মামেরী। ১৯৫৩ সালে প্রথম আরোহনের আগেই ৩১ জন হিমালয়ের পশ্চিম প্রান্তের গিলগিট-বালিস্তানের এই পর্বত আরোহন করতে গিয়ে মারা যাওয়ায় এই পর্বত “খুনি পর্বত” নামেই পরিচিত। স্থানীয়দের কাছে নাঙ্গা পর্বতে দেওমীর অর্থাৎ “রাজা পর্বত” নামেই পরিচিত ছিল। এই পর্বতের তিনটি মূল ঢাল হলো ডায়ামিররাখিওত এবং রুপাল। এর মাঝে পর্বতের দক্ষিণে অবস্থিত রুপাল ঢাল পৃথিবীর দীর্ঘতম পর্বত ফেস হিসেবে পরিচিত।

ককেশাসে মামেরী অনুভব করেছিলেন দূরবর্তী সুবিশাল পর্বতমালার প্রতি তাঁর আকর্ষণ। তাই ১৮৯৫ সালের ২০ই জুন তিনি বেরিয়ে পড়েন হিমালয়ের উদ্দেশ্যে। অভিযানের ধরণ ছিল এমন যা অনেক বছর পর খ্যাতি লাভ করে “আল্পাইন স্টাইল” নামে। সেই অভিযানে গিয়ার্স ছিল যথসামান্যই। আর দলও ছিল খুবই ছোটযা ওই সময়ে ছিল কল্পনাতীত। মাত্র ছয়জনের দল নিয়ে তিনি হাজির হয়ে যান নাঙ্গা পর্বতের গোড়ায়। দলে মামেরী ছাড়াও ছিলেন আরো ৩ ব্রিটিশ পর্বতারোহী জন নরম্যান কোলিজেফ্রি হাস্টিংস এবং চার্লস ব্রূস এবং দুই গোর্খা রুঘুবীর থাপা ও গোমান সিং।

প্রকৃতপক্ষে সেই সময় এই উচ্চতার পর্বত সম্পর্কে কোন সম্যক জ্ঞানই তাঁর ছিলোনা। তিনি নাঙ্গা পর্বত সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতেন না। এও জানতেন না যে অতি উচ্চতায় অক্সিজেনের পরিমান কমে যাওয়া শরীরে কি প্রভাব ফেলে। যাতায়াত সহজ দেখেই তিনি নাঙ্গা পর্বত বেছে নিয়েছিলেন এবং মনে করেছিলেন সহজেই এই পর্বত আরোহন করতে পারবেন। অভিযানে তাঁর সাথে নিয়েছিলেন চামড়ার জুতা ও সেই যুগের উলের বুননের কাপড়! তিনি মনে করেছিলেন আল্পসের মতোই একই লাইট-ওয়েট মেথডে তিনি নাঙ্গা পর্বত আরোহন করে ফেলবেন। তিনি এই পর্বতকে শুধুমাত্রই কাঠিন্যের ভিত্তিতে বিবেচনা করেছিলেন এবং অন্য কোন অনুঘটক বিবেচনায় নেননিযা ছিল তার সবচেয়ে বড় ভুল।

Diamir-Face

৩ নং লাইনই (নীল) মামেরী রিব

প্রথমেই রুপাল ফেস পরিদর্শন করে মামেরী এই ফেস সম্পর্কে বলেছিলেন “দক্ষিণ দিকের সুবিশাল পাথুরে শৈলশিরাঝুলন্ত গ্লেসিয়ারের বিপদখাড়া উঠে যাওয়া বরফ – এই স্তম্ভিত করে দেয়া কাঠিন্যএইরকম ভয়াবহ ঢাল  – আমি খুব কমই দেখেছি”।  এরপর তাঁরা সরে যান রাখিওতের দিকে। তিনি তাঁর স্ত্রী মেরীকে ১৭ই জুলাই লিখেছিলেন “আমার মনে হয়না নাঙ্গা পর্বতে তেমন কোন কাঠিন্য আছে”। অবশ্য আগস্টের ৯ তারিখই তিনি ভুল স্বীকার করে লিখেন “বাতাস ঝামেলা করছেএখানকার বাতাস অদ্ভূত।” কয়েক দফা চেষ্টা করেও তেমন অগ্রগতি না হওয়ায় কোলি মামেরীকে বোঝান যে এই পথ তাঁদের সাধ্যের বাইরে এবং তাঁদের অন্য কোন পথে চেষ্টা করা উচিত। তাই তাঁরা ডায়ামির ঢালের দিকে এগিয়ে যান। কোলি, ব্রূস ও হাস্টিংসের অল্টিচ্যুড সিকনেস দেখা যাওয়ায় তাঁদের ৩ জনকে অপেক্ষা করতে বলে তিনি রঘুবীর ও গোমানকে নিয়ে নতুন উদ্যোমে আরোহন শুরু করেনযার লক্ষ্য ছিল সেকেন্ডারি দুইটা পর্বতের (নাঙ্গা পর্বত-২ এবং গানেলো পর্বত) মধ্যে দিয়ে এগিয়ে গিয়ে তাঁরা সামিটে পৌঁছাবেন। তাঁরা এই পথে ৬১০০ মিটার পর্যন্ত এগিয়েও যান। তাঁদের বেছে নেয়া এই পথই মামেরী রিব নামে পরিচিত। মামেরী রিবের ভয়াবহতা বোঝাতে শীতকালীন পর্বতারোহণের সবচেয়ে সফল নাম সিমোনে মোরোর একটি উক্তিই যথেষ্ট – “মামেরী স্পার আরোহন করতে চাওয়া আত্মহত্যার চেষ্টার নামান্তর”। এই পথে ১২৫ বছর পরেও বাঁধা অতিক্রম করা সম্ভব হয়নি। আর এই ভয়াল পথের সর্বশেষ শিকার ২০১৮-১৯ এর শীতকালীন অভিযানে যাওয়া ইতালিয়ান ডেনিয়েল নার্ডি ও ব্রিটিশ টম ব্যালার্ড। ডেনিয়েল নার্ডি এর আগেও ৪ বার মামেরী রিব ধরে আরোহনের চেষ্টা করেছিলেন। ১৮৯৫ সালের ২৪ই আগস্ট,  ৬১০০ মিটার উচ্চতা হতে ডায়ামির ঢাল থেকে ডায়ামির গ্যাপ দিয়ে রাখিওত ঢালের দিকে তাঁরা সরে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এই সময় হঠাৎ উপর থেকে নেমে আসে এক তুষারধ্বস এবং তিনজনকেই ভাসিয়ে নিয়ে যায়। তাঁদের দেহাবশেষ আর কখনোই খুঁজে পাওয়া যায়নি। ৫৮ বছর পর ১৯৫৩ সালে প্রথম নাঙ্গা সামিট করা হেরমান বুল মামেরীকে আখ্যায়িত করেছিলেন সর্বকালের সেরা পর্বতারোহীদের অন্যতম হিসেবে।  

Tomb-1024x608

ডোভারে মামেরীর একমাত্র স্মৃতি চিহ্ন

মামেরীর মৃত্যুর পর মেরী হিলডাকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যান. ১৯৪৭ সালে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত মেরী আর বিয়ে করেননি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্বের পর মামেরীদের সেই ট্যানারির স্থানেই নির্মিত হয় পেনচেস্টার কোর্ট। আর তাঁর জন্মস্থান মাইসন ডিও হাউজে তৈরী হয় টাউন লাইব্রেরি। ডোভার টাউন কাউন্সিল ২০০৪ সালে এই বাড়িটি কিনে নেয়। সেখানে একসময় তার নাম একটি স্মৃতিফলক থাকলেও এখন আর কিছুই নেই। সম্পূর্ণ শহরে মামেরীর একমাত্র স্মৃতি চিহ্ন আছে চার্লটনের সেইন্ট পিটার এন্ড পল চার্চ ইয়ার্ডের এক ছোট্ট পাথরে খচিত নাম। যেই ডোভারে মামেরী জন্মেছিলেনবেড়ে উঠেছিলেনকাজ করেছিলেনথেকেছিলেন সেই ডোভার তাঁর নাম মনে না রাখলেও বিশ্বের কাছে মামেরীর নাম আধুনিক পর্বতারোহণের জনক হিসেবেই উচ্চারিত।

*************************************************************************************

তথ্যসূত্রঃ

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *